গর্ভ রোধ করার জন্যে বিভিন্ন ধরনের গর্ভনিরোধক পদ্ধতি রয়েছে। তবে কোন পদ্ধতিটি আপনার জন্যে সঠিক হবে সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনার শরীর, জীবনযাপন করার ধরন এবং আপনার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আপনিই কেবল জানেন। নিজে ভেবে দেখুন কোনটা আপনার পক্ষে সঠিক, অন্য কেউ কি বলেছে সেটা নয়। আমরা আপনাকে তথ্য জানানো এবং সকল পদ্ধতির মধ্যে ঠিক পথটি খুঁজে নিতে সাহায্য করার জন্যে আছি।
গর্ভনিরোধক পদ্ধতি বেছে নেওয়ার রাস্তা
স্থায়িত্ব
যদি আপনি বেশ অনেকদিন পরে গর্ভ ধারণ করতে চান(যেমন ৩ বছরের বেশি)-তখন কোনো কিছু স্থাপন, কপার আইইউডি এবং হরমোনাল এলইউডিআপনার পক্ষে সবথেকে ভালো উপায়। এগুলির কার্যকারিতা ৩ থেকে ১২ বছর থাকতে পারে, এই পদ্ধতিগুলি অনুযায়ী এগুলি শরীর থেকে বার করে ফেলার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আপনার গর্ভ ধারণ ক্ষমতা ফিরে আসার কথা।
এই পদ্ধতিটি যদি খুব লম্বা মনে হয়, তাহলে আরও কিছু সংক্ষিপ্ত উপায় আছে, যেগুলি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে নেওয়া যায় এবং যেগুলি ১ থেকে ৩ মাস কার্যকরী থাকে।
আরও কিছু পদ্ধতি রয়েছে যেগুলি আপনাকে একবারের জন্যেই সুরক্ষিত রাখতে পারে, কিছু পদ্ধতি যেগুলি যৌন মিলনের আগেই তৈরি রাখতে হয় যেমন
ডায়াফ্রাম, স্পারমিসাইড্, স্পঞ্জ, সারভাইকাল ক্যাপ্ এবং রিং । এই শ্রেণির মধ্যে পুরুষ কন্ডোম এবং মহিলা কন্ডোমও পড়ে। মনে রাখবেন আপনার উচিত প্রত্যেকবার আলাদা আলাদা কন্ডোম ব্যবহার করা।
হরমোন্স্
গর্ভ নিরোধের জন্যে হরমোনের ব্যবহার করার বিষয়ে অনেক মিথ আছে- বিশেষত এর ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে। এইসব গল্প কোনোটাই বিজ্ঞানভিত্তিক নয় এবং অনেক ধরনের গবেষণায় এই পদ্ধতির সুরক্ষা প্রমাণিত হয়েছে।
হরমোনেরও অনেক রকম সমবায় আছে। একই সমবায় সকলের জন্যে নয়-বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে হরমোন কাজ করে। বেশিরভাগ হরমোন-এ প্রোজেস্টেরোন থাকে অথবা প্রোজেস্টেরোন এবং ইস্ট্রোজেন-এর সমবায় থাকে যেটা আপনার মাসিক নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং গর্ভ নিরোধ করে। আসলে যেসব মহিলাদের এন্ডোমেট্রিওসিস অথবা ফাইব্রয়েড্ থাকে যার ফলে তীব্র বেদনা ভোগ করতে হয় ও বেশি রক্তক্ষরণ হয় তাঁদের ক্ষেত্রে হরমোন-এর দ্বারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ করলে সাহায্য হয়। কিছু কিছু বিকল্প আপনি ভেবে দেখতে পারেন যেমন হরমোনাল আইইউডি, ইমপ্লান্ট, গর্ভপাতের বড়ি অথবা প্যাচ্।
যদি আপনার কোনো পদ্ধতি সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতা না থাকে, হরমোনাল গর্ভনিরোধক পুরোপুরি খুলে নেবেন না! আরও কোন উপায় থাকতে পারে যাতে আপনার শরীরে কাজ হতে পারে। যাই হোক, আপনি যদি হরমোন ব্যবহার করতে না চান, কপার আইইউডি ,ভালো বিকল্প। এটা খুবই কার্যকরী, অনেকদিন টিকে থাকে এবং বছরে একবার ডাক্তারের কাছে দেখিয়ে নেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে হয় না। আপনি কন্ডোম ( মহিলাদের জন্যে বা পুরুষদের জন্যে) ব্যবহার করতে পারেন।
নিজেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে অথবা ডাক্তারের সাহায্যে?
প্যাচ্, বড়ি, কন্ডোম, সারভাইক্যাল ক্যাপ, ড্যাফ্রাম্ বা স্পার্মিসাইড্স্-এর মতো পদ্ধতিগুলি প্রায়ই দোকানে পাওয়া যায় যেগুলো আপনি নিজেই নিজের শরীরে ব্যবহার করতে পারেন ডাক্তারের সাহায্য ছাড়াই। এইসকল পদ্ধতিগুলি নিয়মিত এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে আপনার ওপরেই বর্তায়। যেমন, বড়ি-র ক্ষেত্রে আপনাকে মনে করে রোজ সেটা নিতে হবে, কন্ডোম-এর ক্ষেত্রে আপনাকে সেটা ঠিকমতো পরতে হবে এবং নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে যাতে সেটা কাজ করে।
যদি আপনি এটা করতে অসুবিধে বোধ করেন, তাহলে আপনাকে আর একটু সুবিধাজনক দীর্ঘ সময়ের জন্যে কার্যকরী পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে যেমন
আইইউডি, পাত লাগানো বা ইঞ্জেকশন নেওয়া। আইইউডি
( হরমোনাল বা বিনা হরমোন) এবং পাত লাগাতে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, আর ইঞ্জেকশন নেওয়ার জন্যে আপনাকে ডাক্তারের কাছে প্রতি ১,২ বা ৩ মাস ছাড়া ছাড়া যেতে হবে-সেটা নির্ভর করছে আপনি কোনটা বেছে নেবেন তার ওপরে।
নিরবচ্ছিন্ন সুরক্ষা
যদি আপনি দীর্ঘ সম্পর্কে থাকেন এবং নিয়মিত যৌন সম্পর্কে থাকেন, তাহলে আপনাকে এই পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে যে পিল, ইঞ্জেকশন, ইমপ্লান্ট বা আইইউডি-র মতো পদ্ধতি আপনার নিতে হবে যা আপনাকে বিরতিহীন সুরক্ষা দেয়।
আর আপনার সম্পর্ক যদি বিক্ষিপ্ত হয় তাহলে আপনি ‘বেরিয়ার পদ্ধতি’ যেমন কন্ডোম বা ডায়াফ্রাম এবং স্পারমিসাইড ব্যবহার করতে পারেন। এইসকল পদ্ধতিগুলির সুবিধা হল যে কেবল যৌন মিলনের সময়েই আপনি আগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
জরুরী সাহায্য
যদি আপনার সন্দেহ থেকে থাকে যে আপনি গর্ভ রোধক পদ্ধতি ঠিকমতো ব্যবহার করেছেন কিনা বা আদৌ কোনো সুরক্ষা নিয়েছেন কিনা সেক্ষেত্রে জরুরী ভিত্তিক গর্ভ নিরোধক বড়ি হল সব থেকে ভালো উপায়। এই বড়ি একটি বা দুরকমের দুটি নিতে হয়, দুই রকমই সমানভাবে কার্যকরী।
মনে রাখবেন যৌন মিলনের প্রথম ৭২ ঘন্টার মধ্যেই এই বড়ি নিতে হবে যেহেতু প্রত্যেক দিন এর কার্যক্ষমতা কমতে থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথা অনুযায়ী জরুরীভিত্তিক গর্ভনিরোধ গর্ভ ধারণ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে না এবং ইসিপি নেওয়ার পরে পুনরায় গর্ভ ধারণ ক্ষমতা ফিরে পেতে কোনো দেরি হয় না।
কপার আইইউডি-ও জরুরীভিত্তিক গর্ভনিরোধক হিসেবে কাজ করে থাকে। অরক্ষিত যৌন মিলনের পরে ৫ দিন পর্যন্ত এর কার্যক্ষমতা থাকে এবং আপনি ১২ বছর পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকতে পারেন।
আপনার ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করুন
ডাক্তারের কাছে যেতে কখনো দ্বিধা রাখবেন না কারণ আপনার মেডিকেল ইতিহাস অনুযায়ী একটির থেকে অন্য পদ্ধতিটি আপনার জন্যে আরেকটু ভালো। কিন্তু আপনিও চর্চা করুন গর্ভনিরোধ পদ্ধতিগুলির বিষয়ে এবং আপনার ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করুন। যদি দরকার হয় আপনার কোনো বন্ধু বা সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে নিন সব কটি উপায়কে খতিয়ে দেখার জন্যে।
যদি আপনি সাধারণ গর্ভনিরোধক পদ্ধতিগুলির বিষয়ে আরও জানতে চান তাহলে আসুন আমাদের findmymethod -এ এবং আপনার চাহিদা অনুযায়ী আমাদের কন্ট্রাসেপ্টিভ্ ফাইন্ডার-এ দেখুন, আপনি একটি অন্যটির সঙ্গে তুলনা করেও দেখতে পারেন।
দি ফাইন্ড মাই মেথড-এর লোকজন আপনার জিজ্ঞাসা সমাধান করার জন্যেই থাকবে, আমাদের সঙ্গে সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট-এ যোগাযোগ করুনঃ ফেসবুক, ইন্স্টাগ্রাম, টুইটার অথবা আপনার প্রশ্নসমেত আমাদের ইমেল করুন info@findmymethod.org-এ।
তথ্যসূত্র:
- World Health Organization Department of Reproductive Health and Research (WHO/RHR) and Johns Hopkins Bloomberg School of Public Health/Center for Communication Programs (CCP), Knowledge for Health Project. Family Planning: A Global Handbook for Providers (2018 update). Baltimore and Geneva: CCP and WHO, 2018
- Burkman R, Schlesselman JJ, Zieman M. Safety concerns and health benefits associated with oral contraception. American Journal of Obstetrics and Gynecology 2004, https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/15105794
- Emergency contraception, World Health Organization, February, 2018, https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/emergency-contraception