
আপনার যোনিদেশ চুপিচুপি কথা বলেঃ ক্ষতিকর অভ্যাস যোনিদেশ নিয়ে এবং নিজের যত্ন নিয়ে কতকগুলি টিপ্স্
যোনিদেশ আমাদের শরীরের অঙ্গগুলির এমন একটি অঙ্গ যেটি সম্পর্কে কেবল ভুল বোঝাই হয়েছে। যদি আপনার যোনিদেশ কথা বলতে পারত, তাহলে কি বলত? একবার আমরা একটা প্রবন্ধে পড়ি যোনিদেশ পরিষ্কার রাখতে হবে এবং পরের মুহূর্তে আমরা দেখি আর একটা প্রবন্ধে বলা হচ্ছে কেন আমাদের যোনিদেশ ‘’পরিষ্কার রাখা’’ অস্বাস্থ্যকর।
ইন্টারনেটে প্রাপ্তিযোগ্য একগাদা তথ্য যেগুলি যাচাই করা হয় নি, আমরা প্রায়ই এগুলি করতে গিয়ে ভুলপথে যাই, যোনিদেশ-এর ক্ষেত্রেও একই রকম। বাস্তবে এখন যোনিদেশের যত্ন নেওয়া শুধরে নেওয়া সচেতনভাবে জীবনযাপনের মধ্যেই পড়ে যাতে যোনিদেশ আরও স্বাস্থ্যকর থাকতে পারে।
নিজের যত্ন নেওয়ার প্রথম ধাপ হল সমস্যার কারণ বোঝা; মূল কারণগুলির একটি তালিকা দেওয়া হল যার কারণ অস্বাস্থ্যকর যোনিদেশঃ
১) চাপ
এই তালিকার মধ্যে এই বিষয়টি একেবারে আশাতীত, তাই না? কিন্তু চাপের কারণে হরমোনাল অসাম্য যোনিদেশের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে।
কিছু মহিলা চাপে থাকলে তাঁদের যোনিদেশে চুলকানি হতে পারে; আপনি যত চুলকোবেন, তার ফলে ছড়ে যেতে পারে এবং আপনার আরও বেশি চুলকানোর ইচ্ছে হতে পারে কারণ তাহলে সম্ভবত আপনার যোনিদেশে আরও ছোটো ছোটো ছড়ে যাওয়া ঘটতে পারে এবং চুলকানি ও ছড়ে যাওয়ার চক্র চলতেই থাকবে।
২) রাসায়নিক-এর ব্যবহার
আমরা সমানে যোনিদেশে রাসায়নিক-এর ব্যবহার করে থাকি এবং কখনো কখনো সতর্কও থাকি না। সুগন্ধিত টিস্যু, মেয়েলি প্রসাধনী, সাবান, গুঁড়ো সাবান, স্পার্মিসাইড্, লুব্রিকেন্টস্, যোনিদেশে ব্যবহৃত কন্ডিশনার, লন্ড্রির সাবান এইসব কিছুতে রাসায়নিক থাকে। যোনিদেশের ভিতরে চারিপাশে পাতলা শ্লেষ্মা ঝিল্লি এই রাসায়নিক শুষে নেয় খুব তাড়াতাড়ি, তাই সবথেকে ভালো উপায় হল রাসায়নিকের ব্যবহার একেবারে কমিয়ে দেওয়া
আপনি যে স্পার্মিসাইড্ এবং লুব্রিকেন্টস্ ব্যবহার করেন তার উপাদানগুলির তালিকার দিকে নজর দিন, যেমন গ্লিসারিন, পেট্রোলিয়াম জেলি, প্যারাবেন্স্ এবং বেন্জোকেইন্ যেগুলি ব্যাক্টিরিয়া এবং সংক্রামক চর্মরোগ-এর দ্রুত বৃদ্ধির কারণ।
৩) অন্তর্বাস
এটা খুবই আশ্চর্যজনক, তাই না? আমরা যে অন্তর্বাস ব্যবহার করি সেটা আমাদের যোনিদেশকে কতখানি প্রভাবিত করে তা আমাদের চিন্তার অতীত।
সবথেকে ভালো হচ্ছে কিছু না পরা কিন্তু যারা পারেন না, তাঁদের মনে রাখা দরকার প্যান্টি যেন খুব আঁটোসাটো না হয় যাতে ভিজে ভাব থেকে যায় এবং জীবানু জন্মায় সেখানে অথবা সেখানে লোম জন্মানোর কারণ হয়। কেনার সময়ে সর্বদা ঠিক মাপ নিন বিশেষ করে জি-অঞ্চলের জন্যে যেহেতু মাপে ছোটো হলে এই জি অঞ্চল মলদ্বার থেকে জীবানু যোনিদেশে নিয়ে যেতে পারে এবং প্রস্রাবের নালিতে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
৪) খাদ্যতালিকা
আপনি যা খান সেটা আপনার যোনিদেশকে প্রভাবিত করতে পারে এবং শরীরকেও। স্বাস্থ্যবতী যোনিদেশে প্রাকৃতিক অ্যাসিডিক পিএইচ এবং অনেক দরকারী জীবানুও থাকে; কিছু খাবার সেই পিএইচ লেভেল-কে প্রভাবিত করে এবং তার ফলে সেখানে দুর্গন্ধ হতে পারে।
তাছাড়া, যোনিদেশের সমস্যাগুলি যেমন ক্ষত ইত্যাদি খুবই দেখা যায় যেসব মহিলার রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি এবং কখনো কখনো সেটা সতর্কতাসূচক হয়ে দাঁড়ায় অন্যান্য সমস্যার প্রতি যেমন সপ্তাহান্তের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা।
৫) যৌন কাজকর্ম
যৌন সংসর্গ জাত সংক্রমণ হল যোনিদেশের সবথেকে বড়ো শত্রু; সর্বদা এমন কোনো গর্ভনিরোধক ব্যবহারের কথা মনে রাখবেন যেটা দুইয়ের মধ্যে একটা বেড়া স্বরূপ থাকে যেমন ভিতরে এবং বাইরে ব্যবহারের কন্ডোম ওই যৌন সংসর্গ জাত সংক্রমণ এড়ানোর জন্যে এবং মলদ্বার এর পরে যোনিদেশে যৌন মিলনের জন্যে নতুন কন্ডোম ব্যবহারের কথা ভুলে যাবেন না।
সারাক্ষণ চুলকানি, আলাদা রঙের স্রাব এবং দুর্গন্ধ যৌন সংসর্গ জাত সংক্রমণের লক্ষণের কারণ হতে পারে।
৬) যোনিদেশে আঘাত
যোনিদেশে মুখ দেওয়া যৌন আনন্দ দেয় ঠিকই কিন্তু আরও চূড়ান্ত জায়গায় নিয়ে যাবার জন্যে এখানে আরও মিষ্টি স্বাদ আনার জন্যে মধু, ফেটানো ক্রীম, দুধ, চকোলেট বা ফল ঢুকিয়ে দেওয়া ক্ষতিকর এবং তাতে আপনার ক্ষত দেখা দিতে পারে।
৭) শুকিয়ে যাওয়া এবং টাইট হয়ে যাওয়া
মনে করুন আপনার লালাবিহীন মুখগহ্বর; যোনিদেশের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই।তারপরে যোনিদেশের বিভিন্ন ধরনের তরল এবং স্রাব থাকে যেগুলি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক; প্যাড্ ইত্যাদি অ্যালকোহলে ভিজিয়ে এই স্রাব আটকানো যোনিদেশের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর।
যোনিদেশ টাইট করা আর একটি ক্ষতিকর অভ্যাস। যোনিদেশ টাইট করার বড়ি এবং ক্রীম কিভাবে কাজ করে সেদিকে একটু মন দিলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে সেগুলি সাময়িকভাবে যোনিদেশ শুকিয়ে দেয় এবং তার ফলে মনে হয় সেটা টাইট এবং এতে যৌনমিলনে যন্ত্রণা হতে পারে এবং ছড়ে যেতে পারে।
কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন শুরু হওয়া
নিজের যোনিদেশের প্রতি যত্ন নেওয়ার সবথেকে ভালো উপায় হল এই যে নরমভাবে সেটির যত্ন নেওয়া এবং ক্রমাগত সেটা চালিয়ে যাওয়া। এর অর্থ এই যে আপনার জীবনযাপনে বদল নিয়ে আসা। আপনি যেগুলি করতে পারেন সেগুলি হলঃ
১) ক্রমাগত শেখা
যোনিদেশ নিয়ে লজ্জা বা অসম্মানের ব্যাপারটি কমে যাবে যখন আমরা এই সম্পর্কে নিজেরা শিখব এবং অন্যকে শেখাব।
২) যোনিদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক তথ্যাদি
অনেক মানুষ আছেন যারা যোনিদেশ অঞ্চলে যৌন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে লেখেন; যেসকল মানুষ এমন এক এলাকায় থাকেন যেখানে যোনিদেশের স্বাস্থ্যরক্ষা নিয়ে বেশিকিছু জানা যায় না তাঁদের পক্ষে এটা খুব সুবিধাজনক।
ব্লগ এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট দেখুন যেখানে যোনিদেশ সম্পর্কে একেবারে সঠিক ডাক্তারি তথ্য পাওয়া যায়।
৩) অভ্যাস
কেবল যোনিদেশ সম্পর্কে জানাই নয়, যা যা শিখেছেন সেইগুলি সব মেনে চলাই যোনিদেশ সম্পর্কে যত্নের সর্বোত্তম রাস্তা। সেই জন্যেই যোনিদেশ সম্পর্কে আপনার ডাক্তারি পদ্ধতি অনুযায়ী সঠিক তথ্য জানা উচিত।
মোদ্দা কথাটা হল যোনিদেশ শরীরের অন্যতম সহনশীল অংশ, তার প্রতি মন দিন।
আপনার কি কিছু ভাগ করে নেওয়ার আছে? নীচে আপনার মন্তব্য রাখুন, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম-এ। ফেসবুক, ইন্স্টাগ্রাম এবং টুইটার এ অথবা ইমেল করুন info@findmymethod.org. এ। গর্ভনিরোধ বিষয়ে আরও খবরাখবরের জন্যে দেখুন findmymethod.org
লেখক সম্পর্কেঃ আমওস্ সানাসি একজন জনতত্ত্ববিদ, যৌন বিশেষজ্ঞ এবং নাইজেরিয়া-র প্রথম সেক্স্-পজিটিভ্ ব্র্যান্ড রেভাজিনেট এনজি র প্রতিষ্ঠাতা যেটা বিস্তারিতভাবে যৌনতা বিষয়ে তথ্যাদি এবং যৌন আনুষঙ্গিক-এর প্রচার ঘটায়, বিশেষত প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্যে। তিনি টুইট করেন @thesanasi – তে।